সপ্তাহে সাত দিনের ইংরেজী নামকরণ কিভাবে করা হয়েছে এবং কারা এ নামকরণ করেছে?

সূর্য পূর্ব দিগন্ত উঠলেই নতুন আরেকটি দিনের সূত্রাপাত হয়। আবার সূর্যাস্ত হলে রাত বরণ করে নেয় দিনকে। জীবন থেকে একটি দিন খসে যায়। ২৪ ঘন্টায় একদিন হয়। জীবনের একক হল দিন, যা নির্দিষ্ট সময়ের আবর্তে পরিবর্তন হয়। সাতদিনে হয় এক সপ্তাহে। অর্থাৎ সাতদিনের যোগফলই হয় সপ্তাহ। এই সাতদিন যেমন-শনি, রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র সাতটা দিনই কিন্তু ভিন্ন ভ্ন্নি নামে পরিচিত।

এক দিনের নামকরণের অর্থ একরকম। আমাদের সকলের নখদর্পণে সাতদিনের নাম। কিন্তু এই সাতদিনের নামের উৎপত্তিস্থল কোথায় কিভাবে হল তা আমাদের সকলের জানা নেই বা আমরা এর সম্পর্কে অবগত নই। তাহলে চলুন আমরা নামগুলোর ইতিহাস নিংড়াই।

শনিবারঃ ইংরেজীতে বলা হয় Saturday। সে পুরনো কথা  রোমান সাম্রাজের আমলের লোকেরা এই বলে বিশ্বাসী ছিল যে, চাষাবাদের জন্য ‘স্যাটান; নামের একজন দেবতা আছেন। যার হাতে আবহওয়া ভাল খারাপ করা লেখাটি আছে। তাই তাকে সম্মান করার জন্যই তার নামে একটি গ্রহের সাথে সপ্তাহের একটি দিনের নাম স্যাটনি ডেইজ রাখা হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে স্যাটানের দিন। বর্তমানে তা ‘স্যাটারডে’ নামেই পরিচিত।

রবিবারঃ ই্ংরেজীতে বলা হয় Sunday। অনেকদিন আগেই কথা, দক্ষিণ ইউরোপের সাধারণ লোকেরা বিশ্বাস করতো এবং ভাবতো যে একজন দেবতা আছেন যিনি শুধুমাত্র আকাশে গোলাকার আলোর বল আকেন। ল্যাটিন ভাষায় যাকে বলা হয় ‘সলিছ’। এক থেকেই সলিছ ডে অর্থাৎ সূর্যের দিন। উত্তর ইউরোপের লোকেরা এই দেবতাকে ডাকতো ‘স্যানেল ডেইজ’ নামে। যা পরবর্তীতে বর্তমান সান ডেতে রূপান্তরিত হয়।

সোমবারঃ ইংরেজীতে বলা হয়  Monday। এই নামের সাথেও দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা জড়িত। রাতের বেলায় আকাশের গায়ে রূপালী বল দেখে তারা ডাকত ‘লুনা’ নামে। ল্যাটিন শব্দ লুনা ডেইস। উত্তর ইউরোপের লোকেরা ডাকতো মোনান ডেইজ। এ মানডে কিন্তু মোনান ডেজ থেকে উৎপাদিত হয়।

মঙ্গলবারঃ ইংরেজী রূপ Tuesday। আগেকার রোমান রাজ্যের লোকেরা বিশ্বাস করতো যে, টিউ নামক একজন দেবতা আছেন যিনি যুদ্ধ দেখাশুনা করেন। তারা ভাবতো যারা টিউকে আশা করত টিউ তাদেরকে সাহায্য করতো যুদ্ধ ময়দানের এবং যার পরোলোকগত হয়েছে তাদেরকে টিউ পাহাড় থেকে নেমে একদল মহিলা কর্মী নিয়ে বিশ্রামের জায়গা ঠিক করত। তারা একে ডাকতো ‘ডুইস’ নামে। যার ইংরেজী অর্থ টুইস ডে।

বুধবারঃ ইংরেজী রূপ Wednesday।দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হল ‘উডেন’ বলে দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা ভাবতো। তিনি সারা দিনে ঘুরে জ্ঞান লাভ করতেন যার জন্য তার একটি চোখ হারাতে হয়েছিল। এই হারানো চোখকে তিনি সবসময় লম্বাটুপি দিয়ে ঢেকে রাখতেন। দুটো পাখি উডেনের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতো, তারা উডেনের কাধে বসে থাকতো। রাতে তারা সারা পৃথিবীর ঘটনাবলী উডেনকে শুনাত। এভাবেই উডেন সারা পৃথিবীর খবর শুনতে সক্ষম হন। এই জন্য লোকেরা নাম রাখল ওয়েডনেস ডেইস। যা বর্তমান ওয়েডনেস ডে নামে পরিচিত।

বৃহস্পতিঃ ইংরেজী রূপ Thursday। বৃজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোর সম্পর্ক না জানার ফলে মানুষ মনে করতো যে, বজ্রপাত ও বিদ্যুততাবসানের জন্য একজন দেবতা দায়ী। তারা শুধু আলো জ্বলতে ও বিদ্যুৎ চমকাতে দেখতো। তারা দেবতার নাম দেয় থর। তাদের মধ্যে এই অন্ধ বিশ্বাস ছিল যে, দেবতা থর যখন রাগেন তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে আকাশে একটা হাতুড়ি নিক্ষেপ করেন দুটি ছাগলের গাড়িতে বসে। ছাগলের গাড়ির চাকার শব্দ হচ্ছে বজ্রপাত ও হাতুড়ির আঘাত হচ্ছে বিদ্যুৎ চমকানো। থরের প্রতি সম্মান রাক্ষার্থে তারা সপ্তাহের একটি দিনের নাম রাখেন থার্স ডেইস। যাকে আজ আমরা থার্স  ডে বা বৃহস্পতিবার বলে ডাকি।

শুক্রবারঃ ইংরেজীতে বলা হয় Friday। ওডিন একজন শক্তিশালী দেবতা। তার স্ত্রী দেবী ফ্রিগ ছিলেন ভদ্র এবং সুন্দরী। ওডিনের পাশে সব সময় তার স্ত্রী থাকতেন। পৃথিবীকে দেখতেন, প্রকৃতিকে উপভোগ করতেন, প্রকৃতির দেবী ভালবাসা ও বিবাহের দেবীও ছিলেন ফ্রিন। এই জন্য লোকেরা বাকী একটি দিনের নাম ‘ফ্রিগ ডেইজ’ বা ফ্রাই ডে রাখেন।

ইউরোপিয়ানরা তাদের পৌত্তলিক সভ্যতা এবং স্যস্কৃতিকে ধারন করে রাখা ও তা লালন-পালন করার জন্য তাদের চিন্তা-চেতনাকে যেভাবে সুদূর প্রসারী কাজে লাগায় তার মোকাবেলায় আমরা মুসলমানরা কোথায়? তারা আমাদেরকে মধ্যখানে দীর্ঘ একটি সময় শাসন করার মাধ্যমে তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে আমাদের রক্তে মাংসে যেভাবে মিশ্রিত করে দিয়েছে পরে তারা আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেলেও তাদের গোলামীর শৃংখল আমাদের গলদেশ থেকে এখনও ছুড়ে ফেলে দিতে পারি নাই। তার কারণ হলো আমরা আমাদের নিজের পরিচয় জানি না। আর যারা নিজেদের পরিচয় নিজেরা জানে না তরা কারো কাছে গণ্য হয় না। তাই আমাদেরকে জানতে হবে আমাদের নিজেদের পরিচয় এবং বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে আমাদের নিজস্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচয়।

(সূত্রঃ নাজমুল আহসান রাজু, দৈনিক ইনকিলাব)

3 comments on “সপ্তাহে সাত দিনের ইংরেজী নামকরণ কিভাবে করা হয়েছে এবং কারা এ নামকরণ করেছে?

  1. আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দাও আল্লাহ্‌

মন্তব্য করুন